প্রকাশিত: ২৪/১১/২০১৫ ৮:৩৭ অপরাহ্ণ

দু’যুগ ধরে কোন ধরণের সংস্কার নেই

COX_S BAZAR-MOHESHKHALI CICOLON CHANTER PIC-24,11,15 copy
আবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী:
কক্সবাজারের উপকুলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ৯৬ টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৫০ টি আশ্রয় কেন্দ্র দীর্ঘ দু’যুগ ধরে সংস্কার না হওয়ায় সে গুলো এখন জনগনের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে যে কোন সময়ে বড় ধরনের দূযোর্গ আসলেই ঝুঁকিপুর্ণ আশ্রয়কেন্দ্র গুলো ভেঙ্গে গিয়ে বড় ধরনের দূঘর্টনার আশংকা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টরা। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সংস্কার না হওয়ায় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুর ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করছে ।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিলের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে উপকুলীয় দ্বীপ মহেশখালী উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এর পর পরবর্তীতে এলাকার জনগন ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করার জন্য বিদেশী সংস্থা সিসিডিবি, বাংলা-জার্মান স¤প্রীতি, বিশ্ব ব্যাংক, রেড় ক্রিসেন্ট,আইডিএ,জাইকা,সৌদিয়া,জাপান,মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র,গণস্বাস্থ্য,জার্মান,এফডবি¬উ ও ইউনিসেফের অর্থায়নে এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৯৬’টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে কোন রক্ষনা বেক্ষন এবং সংস্কার না হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন ধরনের নজরদারী না থাকায় বর্তমানে ৫০’টি আশ্রয়কেন্দ্র ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে এখন মরণ ফাঁেদ পরিনত হয়েছে। এছাড়া এ এলাকায় বর্তমানে সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের বসবাস হলে ও জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা অতিনগন্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , মহেশখালীতে বিভিন্ন এলাকায় ৯৬টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে গুলো সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগি হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্র গুলি ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া এ এলাকায় আরো ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য গত ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তার মধ্যে মাতারবাড়ি ১৬টি, ধলঘাট ৮টি, কালারমারছড়ায় ৭টি, শাপলাপুর ৬টি, হোয়ানকে ৮টি, বড় মহেশখালীতে ৭টি, কুতুবজোমে ১৩টি, ছোট মহেশখালী ১টি এবং পৌরসভায় ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র।

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, মাতারবাড়ির হংশ মিয়াজির পাড়ার আশ্রয়কেন্দ্রটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরছে। আশ্রয়কেন্দ্রের দরজা ও জানালা ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং দালানে ফাটল ধরায় বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। ধলঘাটা ইউনিয়নের ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে বেশির ভাগই ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে । এসব আশ্রয়কেন্দ্র গুলোর বিভিন্ন অংশে ফাঁটল দেখা দেয়। ধলঘাটা ইউনিয়নের বনজামিরা ঘোনা,সরইতলা,নাছির মোহাম্মদ ডেইল, ও দক্ষিন সুতরিয়া এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র গুলো বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে উঠেছে।

ধলঘাটা ইউনিয়নের সুতরিয়ার বাসিন্দা ও সিপিপির ইউনিয়ন টিম লিড়ার সাইদুল আলম জানান,১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বড় ধরনের দূযোর্গ থেকে এলাকার জনগনকে রক্ষা করার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নিমার্ন করা হয়। কিন্তু এসব আশ্রয়কেন্দ্র গুলোর কোন রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কার না করায় বর্তমানে কেন্দ্রগলোর জনগনের আশ্রয়কেন্দ্র না হয়ে মরন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু জানান,জনসংখ্যার তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা অতিনগন্যের পাশাপাশি যেসব আশ্রয়কেন্দ্র এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে তা দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে তা ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন ঝুঁকিপুর্ণ আশ্রয়কেন্দ্র গুলো সংস্কারের পাশাপাশি এ এলাকায় আরো ২০ টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা অতিব দরকার। একই কথা বললেন মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন,আশ্রয়কেন্দ্র গুলো সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। অপরদিকে ছোট মহেশখালী,কুতুবজোম,শাপলাপুর,ঘটিভাংগা ও সোনাদিয়া এলাকার প্রায় আশ্রয়কেন্দ্র গুলো সংস্কারের অভাবে জরাজির্ণ হওয়ায় তা এখন জনগণের কোন কাজে আসছে না।

একদিকে আশ্রয়কেন্দ্র সংকট,অন্যদিকে যেসব আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে অনেক আশ্রয় কেন্দ্র সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুঁর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বলে তিনি জানান। ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচী বাংলাদেশ রেড়ক্রিসেন্ট সোসাইটির জুনিয়ার সহকারী পরিচালক বলেন, এ উপজেলায় জনসংখ্যার তুলনায় আরো ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন খুবই প্রয়োজন। আর বর্তমানে এ এলাকায় যতগুলো আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে অনেককাংশ ব্যবহারের অনুপযোগি একদিকে আশ্রয়কেন্দ্র সংকট, অন্যদিকে যে সব আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে অনেক গুলো আশ্রয় কেন্দ্র সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ায় এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বলে তিনি জানান। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানায়, মহেশখালীতে বিভিন্ন এলাকায় ৮২টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগি হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া এ এলাকায় আরো ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ইতোমধ্যে ইউএনও একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তার মধ্যে মাতারাবাড়ি ১৬টি, ধলঘাটা ৮টি, কালারমারছড়া ৭টি, শাপলাপুর ৬টি, হোয়ানক ৮টি, বড় মহেশখালী ৭টি, কুতুবজোম ১৩টি, ছোট মহেশখালী ১টি এবং পৌরসভায় ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ প্রসঙ্গে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, এলাকায় ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ঝুঁিকপূর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবং আরো কিছু আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে যে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। এ উপকূলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

পলাশ বড়ুয়া:: উখিয়া কলেজের বার্ষিক শিক্ষা সফর-২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে আজ। নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রায় ...